।।ফেস্টিভ্যালের ডায়েরি। তৃতীয় দিন-২ এপ্রিল।|
পর্ব ১ –
তৃতীয় দিনে পা দিল অষ্টম কলকাতা পিপল্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। ইতিমধ্যেই মুখে মুখে কথা ছড়িয়ে, খবরের কাগজের প্রতিবেদন পড়ে চেনা দর্শকদের পাশাপাশি সমবেত হচ্ছিলেন নতুন দর্শকরা – তাদের মধ্যে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। মূল প্রেক্ষাগৃহের পাশাপাশি উৎসাহী দর্শকদের ভিড় একতলার লবিতে, বই, ডিভিডি, ব্যাগ, পোস্টার সংগ্রহ করতে, এবং সমসময় নিয়ে সাত জন শিল্পীর প্রদর্শনীকে ঘিরে। জং ধরা সাইকেলের ক্যারিয়ারে জ্বলজ্বল করছে একটি গ্লো-সাইন – বড়লোকের পিঠের চামড়ায় গরিবের পায়ের জুতো। সাইকেলের হ্যান্ডেলে বিন্যস্ত রয়েছে কৃষক আন্দোলনের নিজস্ব কাগজ – ট্রলি টাইমস এর বাংলা সংস্করণ। পড়তে চাইলে কেউ তুলে নিতে পারেন। পাশে একটি বিধ্বস্ত মাইলফলক – রেললাইনের নুড়িপাথরের গায়ে বসানো – গায়ে লেখা “ইনফিনিটি” মাইল। মাইলফলকের সিমেন্ট ঢালাইয়ের মধ্যে ভাঙা কাঁচের চুড়ি, একটা কানের ঝুমকো, আধপোড়া বিড়ির টুকরো, আর ট্রেনে চাপা পড়া মানুষের দেহাংশ। অভিবাসী শ্রমিকদের ধ্বংসের স্মৃতি বয়ে নিয়ে চলে। দোতলার লবিতে আরেকটি শিল্পকর্ম সেই যাত্রারই সাক্ষ্য বহন করে। পোড়া রুটি, ভাঙাচোরা হাত, থানে মোড়া শ্রমিকের রক্তাক্ত দেহ ছড়িয়ে থাকে এক গহীন কালো রাতের আবহে। এ অনন্ত দুঃসহ যাত্রার শেষ কোথায়? শেষ কোথায় তারই ইঙ্গিত পাই অন্য দুটি শিল্পকর্মে। নানারঙের গামছা দিয়ে ধানক্ষেতের আদল, দিকচক্রবালে লাল সূর্য উঠছে। শাড়িকে আলতার রঙে ছুপিয়ে কে যেন ক্ষেতের মাঝে লিখে রেখেছে – ভাতের কোন ধর্ম নেই, জাত নেই, রঙ নেই…চাই ভাত, পেট ভরা ভাত। বাইরে একটি ট্র্যাক্টর যেন অযান্ত্রিকের জগদ্দলের ভরা যৌবনের প্রাণোচ্ছলতায় উদ্বেলিত, কৃষকের সবুজ-হলদে ঝান্ডা পতপত করে উড়ছে। কাগজ-লণ্ঠনের গায়ে কৃষকের অভিজ্ঞান। বাইরে তখন নিপীড়ন ও প্রতিরোধ, ভীরুতা ও সাহসের ইতিহাস দেশ বিদেশের শিল্পীদের স্কেচের একটি কোলাজে মূর্ত হয়ে উঠেছে। বইয়ের স্টলকে ঘিরে আঠারোটা পোস্টার ফেস্টিভ্যালের ছবিগুলির মূল সুরকে ধরে রেখেছে নানা ব্যঞ্জনায়। এক কোনায় একটি ছবিতে দেখা যায় গঙ্গায় ভাসছে তুলোর মোড়া শবদেহ, ছবির গায়ে সারি সারি পেরেক পোঁতা – রাষ্ট্রীয় ব্যারিকেড – বেশি কাছে গেলে এ ছবিও রক্তাক্ত করবে দর্শককে। এই শিল্পপ্রদর্শনীকে ঘিরে গত তিন দিন উৎসাহ ছিল লক্ষ্যণীয়।
আজকের প্রথম ছবি নেপালের চিত্রনির্মাতা প্রবীণ কুমার রাওয়াতের স্বল্পদৈর্ঘ্যের কাহিনিচিত্র “কালাম”। নেপালের গৃহযুদ্ধর প্রাক-মুহূর্তের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই শর্টফিল্মটি লেখা, এবং তার সাথে উপরি পাওনা হিসেবে রয়েছে একটি আদ্যোপান্ত ফুটবলপাগল কিশোরের কথা। ছেলেটির গ্রামবাসীরা সবাই গ্রাম ছেড়ে ভারতে চলে যাচ্ছে জীবিকার জন্য, এমনকি তার বাবাও মুম্বইতে গিয়ে কাজ করেন। কিশোরটি সেখানে যেতে চায়না কারণ সে ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলতে চায়। এরকমই একটা সময়ে গ্রামের একজন কমিউনিস্ট নেতার খুন হওয়া পুরো গল্পটিকে ঘুরিয়ে দেয় অন্য মোড়ে। সারাদেশে সহিংসতার ছায়া কালামের গ্রামেও পৌঁছে কালামের জীবনকে পুরো বদলে দেয়। একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিটি নিষ্পাপ শৈশব, দেশান্তর এবং হারানো স্বপ্ন নিয়ে।
দক্ষ সিনেমাটোগ্রাফির সাথে শক্তিশালী চিত্রনাট্য এই শর্টফিল্মকে করে তুলেছে অনন্য। ফুটবল নিয়ে কালামের আগ্রহ বেশ চোখে পড়ার মতন। মুখ্য চরিত্রে কালামের অভিনয়ও বেশ পরিণত তবে ছবির মুখ্য আকর্ষণ এর অভুতপূর্ব ক্লাইম্যাক্স। দাঙ্গার সময়ে কিছু টানটান সিকোয়েন্স এই ছবিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। ফুটবলকে এখানে একটা বিশেষ রূপক হিসেবে পরিচালক ব্যবহার করেছেন। সবমিলিয়ে এই ছবিটি অষ্টম কলকাতা পিপলস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এর তৃতীয় দিনের উদ্বোধনী ছবি হিসেবে সফল।
পরের ছবি প্রিয়া থুভাসারি নির্দেশিত তথ্যচিত্র “সিটি গার্লস” – গ্রাম মফস্বল থেকে শহরে আসা অনেক মেয়ের কাহিনি এতে মরমের সাথে ধরা পড়েছে। ছবিটি উত্তরপ্রদেশের ছোট শহর বান্দা থেকে এখন দিল্লিতে বসবাসকারী দুই স্বাধীনচেতা মেয়ে, উমরা এবং কুলসুমের অন্তরঙ্গ চিত্রায়ন। পর্দায় দুই তরুণীকে শহরে যাওয়ার পর তাদের জীবনের কথা বলতে দেখে মনে একটা অভূতপূর্ব সময়যাত্রার অনুভব করতে পারা যায়। একটি ছোট জনপদ থেকে মহানগরে চলে যাওয়া, শহরের শহুরে জৌলুসকে ভয় পাওয়া, বাঁচতে শেখা বা বাড়ি ফিরে যাওয়া, এই সব ঘটনার মধ্যে ফিল্মটি চলতে থাকে। উমরা বেশ কয়েক বছর দিল্লিতে থাকাকালীন দিল্লির অনেক চাকচিক্য আগেই দেখে নিয়েছে এবং নিজেকে সেইমতো গুছিয়ে নিয়েছে। শহরের জীবনের কথা উমরার থেকে শুনে কুলসুমেরও আসতে ইচ্ছে করে। উমরা যেরম শহরের তরিকাগুলি শিখে এখন প্রবল আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে, সেটাই সে কুলসুমকে শেখাতে থাকে। যদিও একটা একা মেয়ের জন্য সাবলম্বী এবং স্বাধীন হয়ে ওঠা সহজ ছিলোনা, সেখানের প্রায় সব ঘটনাই তার পায়ে বেড়ি পড়িয়ে তাকে আটকে রাখতে চেয়েছিলো। কিন্তু তার অদম্য উৎসাহ, সাহস আর অধ্যবসায় তাকে স্বাবলম্বী করে তোলে। শহুরে মেয়েদের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে শেখায় তাকে। এই আত্মবিশ্বাসই এই ছবির মূল প্রাণ। ছবির পার্শ্বসঙ্গীত এবং গানগুলি অসাধারণ ভাবে প্রযুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ছবিটি সত্যিই উৎকর্ষতার দাবি রাখে।
পরের ছবি “অ্যানোনিমাস” জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক-অধ্যাপক মিঠুনচন্দ্র চৌধুরী নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র। অনেকের মতো যারা জীবন ও জীবিকার সন্ধানে বড় শহরে পাড়ি জমায়, পরিচালক ও তার অনেক সাথী, মহারাষ্ট্রের পাটকুল নামে একটি ছোট গ্রামের বাসিন্দা, পুনেতে সেভাবেই এসেছিলেন। ছবিটি অভিবাসী অসংগঠিত শ্রমিকের জাত ও শ্রেণী পরিচয়কে সামনে তুলে ধরে। দুর্দশাগ্রস্ত কৃষক, বিশেষ করে দলিত এবং মুসলমানরা, যাদেরকে এই ধরণের অনিশ্চিত অসংগঠিত শ্রমের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে এবং দিনের পর দিন ধরে যারা অবহেলিত, অসম্মানিত তাদের কথা বলেছে ছবিটি। যারা সমাজের ইমারত গড়ে চলেছে সারাজীবন ধরে, তাদেরই লাশ যখন ইমারতের নিচে চাপা পরে তখনও এই সমাজের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য ভাঙতে ভাঙতে কখন যে শ্রমিককুল মৃত্যুশয্যায় চলে যায় সেটার খোঁজও সমাজ রাখেনা। সেই খোঁজ দিতেই মিঠুনচন্দ্র চৌধুরীর ছবিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। ইমারতের রূপকে বাঙ্ময় ছবিটিতে তাই ইমারতি মিথ্যার কোনো প্রশ্রয় নেই।
যাদব “মোলাই” পায়েং এর সাথে পরের ছবিটির সূত্র ধরে আমরা পৌঁছে যাই উত্তরপূর্ব ভারতে। ৫১ বছরের যাদব আসামের অরুণা চাপরি গ্রামে বসবাস করেন। আসামের মিসিং উপজাতির সদস্য পায়েং “ফরেস্ট ম্যান” নামে বেশি পরিচিত। ১৯৮০ সালে বৃক্ষরোপণ প্রকল্পে কাজ করা একজন শ্রমিক হিসাবে তার বন্যায়নের কর্মজীবন শুরু হয়। পায়েং ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মাঝপথে প্রকল্পটি পরিত্যক্ত হওয়ার পরেও কাজ ছেড়ে ফিরে যাননি। এর পরের দশকগুলিতে পায়েং এককভাবে ব্রহ্মপুত্র নদীর মাঝখানের একটি চরকে বন-বাস্তুতন্ত্রে রূপান্তরিত করেছেন। পায়েং নিজে বীজ এবং চারা রোপণ করেছেন, সেগুলিকে জল দিয়েছেন এবং ৫৫০ হেক্টরের “মোলাই ফরেস্ট” গড়ে তুলে তাকে লালন পালন করেছেন। তাঁর এই সংগ্রামমুখর জীবনকেই তথ্যচিত্রে রূপ দিয়েছেন পরিচালক আশুতোষ কাশ্যপ। ছবিটিতে কিছু অসামান্য ক্যামেরার কাজ দেখা যায়। প্রকৃতির সাবলীল শব্দে রঙিন এই তথ্যচিত্রটি এককথায় অনবদ্য।
পর্ব ২ –
মৃত জনার্দন, সোনাইয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। জনার্দনের নাতনী সোনাই তার ‘দাদু’কে উষ্ণ হৃদয়ে স্বাগত জানায়। কিন্তু ধীরে ধীরে জনার্দনের পক্ষে তার অনুপস্থিতিতে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনগুলি মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সমস্ত জটিলতা এবং অসুবিধা ছাড়াও, তার পরিবারের উপর এন-আর-সি’র মতো সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়গুলির প্রভাব তাকে চরম কষ্ট দেয়।
মধ্যবিত্ত বাঙালির দৈনন্দিন সংকট ধরা পড়েছে পাভেল পাল নির্দেশিত স্বল্পদৈর্ঘ্যের কাহিনিচিত্র “আকাশপ্রদীপ”-এ। এন-আর-সি ও সি-এ-এর প্রেক্ষাপটে সংকট আরও ঘনীভূত। সাড়ে পাঁচ দশকের বেশী সময় আগে একবার উদবাস্তু হওয়ার পর আবার একই ঘটনার হাতছানি।
আকাশপ্রদীপের ঐতিহ্যে চলে আসে মৃত আত্মীয়। যে ৭৮ এর বন্যায় নিজের সব ‘কাগজ’ হারিয়েছিল। যার ফল হয়তো তার পরবর্তী প্রজন্মকে সামলাতে হবে। সেই টানাপোড়েন, বদলে যাওয়া বাড়ি, অচল ঘড়ি, মৃত জীবনসঙ্গিনীর মৃত্যুকালীন পায়ের ছাপ, যৌথ ছবি, নষ্ট হয়ে যাওয়া রেডিও – সবই খুঁজে পায় সে তার বেকার ছোটছেলের ঘরে। স্বীকার করে যে সে ছেলেকে বুঝতে পারেনি। সে দেখে যে সকল মৃত প্রতিবেশী ফিরেছিল, সময়ের ফেরে আজ তারা সবাই উদ্বাস্তু।
জনার্দন মেলাতে পারে না কিছুই। এই পুরোনো উদ্বাস্তু কিন্তু বর্তমানে মধ্যবিত্ত পরিবারের সমস্ত সমস্যা এই ছায়াছবিতে বর্তমান। এই অদ্ভুত আঁধারে আশার একমাত্র আলো হয়তো তাদের একেবারে নতুন প্রজন্ম। আবহসঙ্গীতে বেজে চলে “আমার সাধ না মিটিলো”।
পরের ছবি ক্ষমা পাডলকর নির্দেশিত তথ্যচিত্র “কুকুন” (গুঁটিপোকার বাসা)। চলচ্চিত্রটির দেখানো সময়কাল হলো ২০২০ সালের মার্চের শেষের দিক, এবং এপ্রিলের শুরু। সময়টি যুগপৎ ভাবে দাবদাহ, অসময়ের বৃষ্টি এবং কোকিলের কুহুডাকের সময় – নিদারুণ বসন্ত। আইসক্রিমের, দুপুরের, ভাত ঘুমের সময়। আসন্ন মহামারীর ধুলো যেন আকাশে উঠেছিল, ভয় ও বিভ্রান্তির অন্ধকারকে বাড়িয়ে দিয়েছিল কয়েকগুণ। ফ্ল্যাটের বারান্দায় ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবারকে। সব থেকে কঠিন সময়ে, যখন গুটিপোকার জীবনযাত্রা চলে পিচগলা রাস্তায়। প্রথম লকডাউনের স্মৃতি জাগানো এই ফিল্মটি সম্পূর্ণরূপে বাড়িতে শ্যুট করা হয়েছে।
বাবা-মায়ের সঙ্গে লকডাউনে হঠাৎ করেই আটকে পড়েন পরিচালক ; একপ্রকার নিরুপায় হয়ে। লোকেদের হাততালি দিয়ে থালাবাসন বাজানোর রাষ্ট্রীয় নির্দেশ দেওয়ার প্রথম ঘোষণাটি যখন করা হল, তখনই পরিচালক সিদ্ধান্ত নেন এই সময়কে ধরে রাখতে হবে। এই সব শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা জানা সে সময়ে সম্ভব ছিল না, কিন্তু তিনি বাড়ির ভিতরের ঘটনাগুলি শ্যুট করছিলেন, দেখছিলেন বারান্দার মধ্য দিয়ে কী কী দেখা যায়। ব্যক্তিগত স্তরে এটি কঠিন সময় ছিল। মানুষ একসাথে বসবাস করতে, মহামারীর মোকাবিলা করতে, আলোচনা করতে না পেরে একা একাই জীবনের ভারসাম্য খুঁজে চলছিল বাধ্য হয়ে। এই অযৌক্তিক সামাজিক ঘটনাবলী শুধুমাত্র হঠাৎ করে নিজেকে অজানার মাঝে খুঁজে পাওয়ার কারণেই নয়, সরকারের গৃহীত ধৃষ্টতাপূর্ণ পদক্ষেপ থেকেও উদ্ভূত হয়েছিল। জনসাধারণকে অপেক্ষায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল যখন কর্তৃপক্ষ তাদের সাড়ম্বর ঘোষণা, গোঁড়ামি, বাগ্মিতা এবং প্রতীকী কর্মে নিয়োজিত রেখেছিল।
এদিনের পরবর্তী তথ্যচিত্র “রূপোশ” নির্মাণ করেছেন দুই থিয়েটারকর্মী মহম্মদ ফেহমিদ ও জিশান আমির খান। রুকসানা বেগম, তার প্রয়াত বাবা মেহবুব খান, এবং তার ছেলে মহম্মদ ফেহমিদ সমসাময়িক ভারতের একটি মুসলিম সংখ্যালঘু পরিবার। ছবিটি দেখিয়েছে মেহবুব খান কীভাবে ভারতে ফিরে এসেছিলেন। দেশভাগের সময় তার পুরো পরিবার পাকিস্তানে চলে যায়। তারপর থেকে পাকিস্তানে আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ কখনো চালু এবং কখনো বন্ধ ছিল, যা কয়েক দশক আগে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। যখন তরুণ প্রজন্ম বিচ্ছিন্ন আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে চায় – দুই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কি কোনো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সম্ভাবনা ও টিকিয়ে রাখার অনুমতি দেবে? এই প্রশ্ন জোরালোভাবে দর্শকদের দিকে ছুঁড়ে দেয় “রূপোশ”।
পরের ছবি “জুনকিরি” (জোনাকি) একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের কাহিনিচিত্র। এই চলচ্চিত্রের কাহিনি পরম্পরায় বহু ঘটনাবলীর সমাবেশ দেখা যায়। ঘটনাবলী প্রকৃতপক্ষে অভূতপূর্ব উপাদান হিসেবে গ্রন্থিত হয়। এখানে দেখানো হয়েছে একটি নেপালীভাষী অভিবাসী পরিবারকে যারা একটি উন্নত জীবনের আশায় নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে আসে। অথচ বিভিন্ন সরকারি নীতি ও ঘটনাবলীর ফলে সাম্প্রতিককালে পরিবারটিকে অস্বাভাবিক অভূতপূর্ব সমস্যার সামনে পড়তে হয়। পরিবারটি আসলে একটি পরিযায়ী শ্রমিক পরিবার। জীবনের অসম্ভব সব ঘাত প্রতিঘাতের সম্মুখীন হয় তারা। মহিলাদের যৌন হেনস্থা, ভাড়া না দেওয়ার কারণে চাপ আসতে থাকে। এদিকে পুরুষটিও কর্মক্ষেত্রে ছুটি পায়না, উপরন্তু মাইনে কেটে নেওয়ার হুমকি পায়। এই পরিবারে ছিলেন একজন আলঝেইমার আক্রান্ত সদস্য। যিনি সব কিছু ভুলে যান, বলা যেতে পারে বর্তমানের সঙ্গে অতীতের পার্থক্য করতে ব্যর্থ হন। তিনি আফসোস করেন নিজের ফেলে আসা জীবনের কথা ভেবে। ফেলে আসা দেশের স্বাভাবিক জীবনকে হারিয়ে ফেলার কথা ভেবে দিন কেটে যায়। সে জীবন যে সে ফেলে এসেছে, বাস্তবে সেই বোধ তার নেই।
বেশিরভাগ অভিবাসী, অভিবাসনের পরে যে পরিবর্তিত জীবনে প্রবেশ করে, তাতে সে তার শিকড়ের মৌলিকতা সম্পর্কে অবিশ্বাস ও বিশ্বাসের দোলাচলে ভোগে। এক উন্নত জীবনযাপনের সন্ধানে বেরিয়ে কীভাবে বাস্তুচ্যুতি একটি শিকড়হীন মানুষের জন্ম দেয়, তাকে পরিণত করে শিকড়হীনতার মূর্ত প্রতিরূপে – এই সামগ্রিক বিষয় সম্পর্কে যে চিরকালীন দ্বন্দ্ব থেকে যায় তা মুন্সিয়ানার সাথে সিনেমামাধ্যমে প্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছেন চিত্রনির্মাতা প্রিন্স প্রসাদ।
পর্ব ৩ –
“বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, / অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর / বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি, / অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী”
ফারহা খাতুনের তথ্যচিত্র “হোলি রাইটস” দেখতে গিয়ে বারবার কাজী নজরুল ইসলামের “নারী” কবিতার এই পঙক্তিগুলি মনে পড়ে। অষ্টম কলকাতা পিপল্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের তৃতীয় দিনের তৃতীয় ভাগে দেখানো হল পূর্ণদৈর্ঘ্যের এই তথ্যচিত্রটি। ছবির গল্প আবর্তিত হয় সাফিয়া নামের এক মুসলিম মহিলাকে ঘিরে; যিনি আদ্যন্ত ধর্মপ্রাণ একজন মানুষ। সাফিয়া মনে করেন পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার মুসলিম পুরুষরা শরিয়ার বিশ্লেষণ করেন এবং সেজন্যই মুসলিম মহিলাদের অধিকার লঙ্ঘিত হয়। এই কারণে তিনি নিজের হাতে এই কাজ তুলে নেন এবং একটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন যারা মুসলিম মহিলাদের কাজী হওয়ার তালিম দেন। সাফিয়াকে দেখে আরও অনেক মুসলিম মহিলা এগিয়ে আসেন এবং এই কার্যক্রমে যুক্ত হন। এই নিয়ে সাধারণ মুসলিম মহিলাদের সংগ্রাম দেখা যায় এই তথ্যচিত্রে; কারণ মহিলাদের কাজী হওয়ার ঘটনা বিরল এবং সমাজের অনেকেই এর তীব্র বিরোধিতা করেন।
পুরো ছবি জুড়ে উঠে আসে মুসলিম মহিলাদের লড়াইয়ের কথা। উঠে আসে তাৎক্ষণিক তিন তালাকের কথা এবং তার বিরুদ্ধে মুসলিম মহিলাদের নাছোড় লড়াইয়ের কাহিনি। উঠে আসে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা তাৎক্ষণিক তিন তালাককে নিষিদ্ধ করার কথাও। ছবির গল্প এগিয়ে যায় সাবলীল ভঙ্গিতে।
এই ছবি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করতে চেষ্টা করে। তা হল নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য আইনের জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা। মহিলাদের অধিকার রক্ষার জন্য ব্যক্তিগত আইন (পার্সোনাল ল) সম্বন্ধে মহিলাদের সম্যক জ্ঞান থাকা কতটা প্রয়োজন তা বোঝা যায় পুরো ছবি জুড়ে। এই উদ্দেশ্যে মুসলিম মহিলাদের কোরান পড়ানোর প্রচেষ্টাও দেখা যায় ছবিতে। ছবির শেষে হাততালিতে ফেটে পড়ে কানায় কানায় ভর্তি প্রেক্ষাগৃহ। ছবির পরিচালক এবং ছবির টিমের ক্যামেরা ও শব্দগ্রহণ বিভাগের সদস্যরা এরপর ছবিটির বিষয়ে আলোচনা করেন এবং দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। দর্শকদের বক্তব্য থেকেও বারবার স্পষ্ট হয়ে উঠছিলো যে এই ছবি কী ভাবে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে।
পর্ব ৪ –
বাণী সিংয়ের পূর্ণদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র “তাংঘ” (“লংগিং”)। ছবিটি জুড়ে আমাদের উপমহাদেশের স্মৃতি বিস্মৃতির মুহূর্ত। ১৯৪৮ এর লন্ডন, আজকের কলকাতা, দিল্লি বা লাহোর। অতীত ও বর্তমানের মুহূর্তরা ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। আর আছে হকি, যে খেলার সাথে উপমহাদেশের ইতিহাস ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। স্বাধীন ভারতের অলিম্পিক হকির প্রথম স্বর্ণপদক জয়ী দলের খেলোয়াড় নন্দী সিং ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত। শরীরের ডান দিক অচল, কথা বলার ক্ষমতাও হারিয়ে গেছে। কিছু অর্ধ উচ্চারিত শব্দ আর সামনে রাখা খাতা আর স্কেচ পেন দিয়ে তিনি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন সেই বিস্মৃতির সময়। তার সাক্ষ্য রেখে গিয়েছেন তার মেয়ে বাণী। বাবার ভেতরের টানকে বোঝার সে যাত্রা তাকে নিয়ে গেছে কখনো কলকাতা কখনো বা লাহোর।
ছবির যাত্রা শুরু হয় একটি সদ্যজাত দেশ কী করে সাহেবদের তৈরি খেলায় তাদেরই নিজেদের মাটিতে তাদের হারিয়ে অলিম্পিক সোনা জেতে সেই গল্প দিয়ে। নন্দী সিং, বলবীর সিং, কেশব দত্তরা তখন তাদের যৌবনের মধ্য গগনে। সত্তর বছর আগের সেই বিশ্বজয়ের স্মৃতি আজও তরতাজা তাদের কাছে। সেই খেলাগুলোর প্রত্যেক মুহূর্ত এই অশীতিপর মানুষগুলোর স্মৃতিতে আজও পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে আঁকা আছে। কিন্তু এই গৌরবের আলোর মধ্যে কোথাও একটা দুঃখ খুব স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়। সেই দুঃখ দেশভাগের দুঃখ। সেই সময়ে হকির প্রাণকেন্দ্রে থাকা দুই জায়গা পাঞ্জাব ও কলকাতাই দেশভাগের ফলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতদিন অবধি একই দেশের একই ইউনিভার্সিটি (লাহোর গভর্নমেন্ট কলেজ) টিমের হয়ে খেলতো যারা, পার্টিশনের এক আঁচড়ে তারাই হয়ে গেল একে অপরের সব থেকে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। নন্দী সিং, কেশব দত্তদের রাতারাতি চলে আসতে হলো অন্য দেশে। পাকিস্তানে রয়ে গেল শাহরুখ, ঘাফুর আজিজুররা। সারা দেশ জুড়ে তখন চলছে লুঠ দাঙ্গা ও সামগ্রিক অস্থিরতা। তারই মধ্যে নতুন দেশে জীবন শুরু করছেন এরা। সেই সময়ের ছাপ আজও আমরা ভুলতে পারিনি। হয়তো সেই কারণেই বাণী এত মরিয়া হয়ে যান বাবার নাড়িছেঁড়া বন্ধু শাহরুখকে খুঁজে পেতে।
লাহোরে এক মাসের ওপর খোঁজাখুঁজি করে অবশেষে বৃদ্ধের দেখা মেলে। তাঁকে পুরনো বন্ধুর পুরোনো সময়ের ছবি দেখান বাণী। সেই ছবিতে যত্ন করে চুমু একে দেন নব্বই বছরের যুবক শাহরুখ। প্রেক্ষাগৃহে তখন একজনও নেই যার চোখ শুকনো…
দেশভাগ কেনো হতেই হত, তার উত্তর আমরা কখনো পাবো না। কিন্তু এই নির্ভেজাল ভালোবাসার মুহূর্ত গুলো হয়তো সেই ক্ষততে কিছুটা হলেও প্রলেপ দেবে।
ছবির পরবর্তী আলোচনায় নির্মাতা বাণী সিং বলেন কী করে ছবিটি তিনি শুরু করেছিলেন। তাঁর স্ট্রোক আক্রান্ত বাবার ১৯৪৮-এর অলিম্পিক জয়ের স্মৃতিচারণা হিসেবে শুরু হয়ে, সেটা ধীরে ধীরে দেশভাগের এক দলিল হয়ে ওঠে। অলিম্পিক কমিটি বা ফিল্মস ডিভিশন থেকে সংরক্ষিত ফুটেজ জোগাড় করে সেটা সিনেমাতে ব্যবহার করতে তাঁকে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে, সেই নিয়েও আলোচনা হয়। দর্শকদের মধ্য থেকে আবেদন করা হয় সিনেমাটি আবার দেখানোর ব্যবস্থা করার জন্য। এর থেকেই পরিষ্কার আজও দেশভাগের যন্ত্রণা আমাদের মধ্যে কতটা সত্যি, কতটা বাস্তব আর সেই স্মৃতির সাথে আমাদের নিজের নিজের যৌথ বোঝাপড়া এখনও কতটা জরুরি। একমাত্র ইতিহাসের বিস্মৃতি দূর করাই আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক শক্তির পরিকল্পিত ইতিহাসবিকৃতিকে রুখে দিতে পারে।
পর্ব ৫-
এদিনের শেষ ছবি শুরু হয় ঠিক সন্ধে সাড়ে সাতটায়। শঙ্কর অর্জুন ধোত্রে পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্যের কাহিনিচিত্র “পোত্রা”। ভারতবর্ষে মেয়েদের জীবন এক অদ্ভুত জটিল আবর্তে ঘুরে বেড়ায়। হয়তো সমস্ত দেশেই পিতৃতান্ত্রিক নিগ্রহের মধ্যে দিয়েই অধিকাংশ মেয়েদের জীবনযাপন করতে হয়। কিন্তু ভারতবর্ষে এর রূপ সত্যিই অন্যরকম। একদিকে স্বাচ্ছন্দ্য আর প্রাচুর্যের মধ্যে একদল তাদের জীবনযাপনের সমস্ত স্বাধীনতাকে উপভোগ করতে করতে তাকে নিয়ে যাচ্ছে এক উচ্ছৃঙ্খলতার পর্যায়ে। আরেকদিকে একাংশ, যেটা আসলে ভারতবর্ষের সবথেকে বড় অংশ, তা পড়ে থাকে এক অদ্ভুত আঁধারে, যার এক অসাধারণ চালচিত্র তুলে এনেছেন শংকর। তিনি এমন একটা বিষয় বেছেছেন যেটা ভারতবর্ষের গ্রামাঞ্চলে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
গীতা হচ্ছে সেই মেয়েটি যাকে স্কুলে পাঠানো হয় অভ্যাসবশত। তার জীবনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা এই গ্রামসমাজ ও তার পরিবার আগেই ঠিক করে রেখেছে।
ছবি শুরু হয় শস্যের ক্ষেত আর মৌমাছিদের অশান্ত ওড়াউড়ির দৃশ্য দিয়ে। সকালে বাবার ডাকে ঘুম থেকে ওঠে গীতা, তৈরি হয় স্কুলে যাবার জন্যে। পুরোটাই এক অভ্যস্ত জীবনের একঘেয়ে বহমানতা। গানের সুরে ধরা থাকে গ্রামীণ পরিবারের গল্প। বাবা ক্ষেতে কাজ করেন আর মা বাড়ির যাবতীয় কাজ করেন। গানের সুরে বর্ণিত সেই চিরাচরিত পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাকে আঁকড়ে রাখেন বাড়ির সবথেকে বড় ঠাকুমা। মৌমাছিদের মধ্যে যেমন রানী মৌমাছি। সারা ছবি জুড়ে মৌমাছিদের এই দ্বান্দ্বিক উপস্থিতি ছবিটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। মাঝে মাঝে ছেলেমেয়ে সবাই মিলে স্কুলের প্রাঙ্গণে নানা খেলায় মেতে ওঠে ওরা। বাবা মা, ভাই আর ঠাকুমা এই নিয়ে ওদের পুরো পরিবার। যখন গীতার ভাই নানা খেলায় মত্ত, তখন গীতা মনোযোগ দিয়ে স্কুলের পড়া করে। পরীক্ষায় ভাল ফল হয়। কিন্তু হঠাৎই গীতার পুরো জীবনটাই পাল্টে যেতে থাকে যখন তার মাসিক শুরু হয়। ভারবর্ষের পিতৃতান্ত্রিক ন্যারেটিভে গীতা হয়ে ওঠে একটি “মেয়ে” এবং “পারিবারিক সম্পত্তি” যাকে রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। খুব সাধারণ কিছু দৃশ্যায়নে শংকর, গীতা ও তার ভাইয়ের মধ্যেকার যে ব্যাবহারিক তফাৎ সেখান থেকে এই পিতৃতান্ত্রিক নির্মাণকে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেন পরিচালক। শেষ পর্যন্ত গীতার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। যদিও গ্রামের নানা কথোপকথনে বাল্যবিবাহের নানা সমস্যা এমনকি বাল্যাবস্থায় সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে যে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে সেটাও উঠে এসেছে। সারা সিনেমা জুড়ে মৌমাছিদের এক সমান্তরাল উপস্থিতি একদিকে যেমন, রানী মৌমাছি কেন্দ্রিক এই সমাজবদ্ধতা এই পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতাবৃত্তের বিপরীতে নারীদের নিজস্ব জোরের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে নিয়ে আসে, অপর দিকে পিতৃতান্ত্রিক কর্তৃত্ব আসলে একজন নারীও কীভাবে বহন করে যেতে পারে, তারও একটি বিশ্বাসযোগ্য রূপকল্প তৈরি করে। একটি সাধারণ বিষয় নিয়ে এরকম একটি অসাধারণ ছবি বানানোর জন্যে শংকরকে অভিনন্দন।
লেখা – কস্তুরী, স্নিগ্ধদেব, সুমিত, সব্যসাচী, দত্তাত্রেয়, অনিন্দ্য
ছবি – নিবেদিতা, সায়ন
অষ্টম কলকাতা পিপল্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
৩১শে মার্চ – ৩রা এপ্রিল ২০২২
উত্তম মঞ্চ, হাজরা
প্রবেশ অবাধ
Leave a Reply
Want to join the discussion?Feel free to contribute!