পেয়ারাবাগানে এক মুঠো রোদ্দুর
মোটর ভেহিকেল্স এর পাশ দিয়ে বেলতলা রোডে ঢুকতেই চোখের সামনে এক ঝাঁক বাচ্চা এসে উপস্থিত। ১৫ই অক্টোবর আমরা পিপল্স ফিল্ম কালেকটিভের পক্ষ থেকে লিটল সিনেমা টিমের ন’জন মিলে গিয়েছিলাম পেয়ারাবাগানে ছোটদের সিনেমা দেখাতে। সে এক হৈ হৈ ব্যাপার। সবাই যেন উৎসবে মেতেছে। রাস্তার খানিকটা অংশ জুড়ে আদ্ধেক তৈরি হওয়া প্যান্ডেলের বাঁশের কাঠামোর গায়ে পর্দা টাঙিয়ে সিনেমা দেখা। পাশ দিয়ে যাতায়াতের জন্য খানিকটা ছেড়ে রাখা। শুরু হল বার্ট হান্সট্রার ‘জু’ দিয়ে। ছোট ছোট মুখগুলোতে অসাধারণ অভিব্যক্তি ফুটে উঠছে। চিড়িয়াখানায় আটক না-মানুষ বাসিন্দারা আর তাদের দেখতে আসা মানুষজন মিলেমিশে গেছে তাদের ব্যবহারিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে। বার্ট হান্সট্রা-র দ্বান্দ্বিক সম্পাদনা আর শব্দের অসাধারণ ব্যবহারে দর্শককে ভাবায় চিড়িয়াখানার পরিসর নিয়ে। মানুষ আর না-মানুষ, আদতে কে কাকে দেখছে? কে কাকে নকল করছে? ছোটরা খুব আনন্দের সাথে উপভোগ করল সিনেমাটি।
পরের সিনেমাটির পরিচালক অশ্বিন কুমার। ছবি ‘লিটল টেররিস্ট’। দেশ আর সময়ের ভেদাভেদ মিটে যায় মানবতায়। ছোট বাচ্চারা নিষ্পাপ হাতে হাততালি দিয়ে ওঠে যখন পাকিস্তানের ছোট্ট ছেলে জামাল খেলার বল কুড়োতে বর্ডার পেরিয়ে চলে আসে ভারতে কিন্তু শেষটায় সেনাবাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পায় গ্রামের হিন্দু শিক্ষক আর তার মেয়ের সাহায্যে। সেই মানুষগুলোই কিন্তু প্রথমে পুরনো অভ্যেসের বশে ওই বাচ্চাটিকে সন্দেহ করেছিল, ধর্মের কারণে এক পাতে খেতে চায়নি।
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘টু’ দেখতে দেখতে ছোটরা বলে উঠল যে বড়লোক বাচ্চাটি ওর দামি খেলনা দিয়ে বারবার গরীব বাচ্চাটিকে হারিয়ে দিলেও পরে বোকা বনে গেল। হঠাৎ দেখতে পেলাম দর্শকদের মধ্যে একটি ছোট ছেলে সামনে একটা ঢাক আর হাতে ঢাকের কাঠি নিয়ে ‘টু’ সিনেমাটি দেখছে ঠিক যেমন সিনেমাতে গরীব বাচ্চাটি ঢোল বাজায়।
