For homepage

আজকাল আমরা বড্ড ব্যস্ত; ছুটছি অনেকে কিছুর পিছনে, অনেক কিছু পাওয়ার জন্য। এভাবে আমরা একদিন হারিয়ে গেলাম গোলকধাঁধার সেই ভুল রাস্তাতে। ব্যস্ত জীবনে সময় কোথায় ঠিক-ভুল নির্বাচনের? তাই সামনে যে রাস্তা পেয়েছি সে রাস্তা ধরে এগিয়ে গিয়েছি। হোক না সেই রাস্তাতে শবদেহের ভিড়, শিশুর বিচ্ছিন্ন দেহ, অথবা যে রাস্তাতে মৃত মায়ের বুকে সন্তানের স্তন্যপান করার নিষ্ফল চেষ্টা। আমরা তো ভারত মাতার সন্তান। আমাদের অন্য মায়েদের ধর্ষিত, মৃত শরীর নিয়ে ভাবনা চিন্তার অবকাশ কোথায়? জয়হিন্দ! ভারত মাতা কি জয়! আমাদের দিকনির্দেশক ধর্মগুরু-রাজনৈতিক গুরুরা বলেছেন এইসব রাস্তাতে চোখ-কান-মগজ-বিবেক বন্ধ করে কিছুটা চলতে পারলে আমাদের আকাঙ্ক্ষার ‘হিন্দুস্থানের’ নির্মাণ একদিন হবে।
তবে এখনো বেশ কিছু মানুষ স্বপ্ন দেখে, প্রেমে পড়ে, ফুটপাথে গোলাপ সাজানো থাকে। এখনো যাদের হৃদয় নামক অঙ্গটি শুধুমাত্র রক্ত সঞ্চালনের জন্য নয়। সেই মানুষগুলির পক্ষে এই গোলকধাঁধার ভুল রাস্তাতে চলা কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। সারাদিন এই ভুল পথের যাত্রায় অবসাদ ও হতাশা তাঁদের চোখের ঘুম কেড়ে নেবে। অথবা অস্থির হালকা ঘুমে স্বপ্ন দেখবে তারা।
‘গুরু …’ এসে পথ দেখাবে; হিংসা থেকে নিষ্ক্রমণ ও হিংসাকে আক্রমণের পথ। সেই স্বপ্ন দেখার রাতে ঘরহীন ফুটপাথের ঘুমন্ত নাগরিক, ভাঙা ঘরের বস্তিবাসী, ন্যায্য মজুরি না পাওয়া কারখানার শ্রমিক, ঋণের দায়ে ধুঁকতে থাকা কৃষক, ডেলিপ্যাসেঞ্জারে প্রতিদিন চিঁড়ে চ্যাপ্টা হয়ে কাজ করতে আসা অসংখ্য মহিলা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা নতুন জীবনগুলো – এমন অনেকে একসাথে ‘গুরু…’র সন্ধান পাবে। শর্ত শুধু একটাই। যাদের হৃদয় এখনো যন্ত্রে পরিণত হয়নি, ‘গুরু’ তাঁদের স্বপ্নেই আসবেন।
সেদিন ভণ্ড ধর্মগুরু, রাষ্ট্রগুরুদের দেখানো পথগুলো ভুল প্রমাণিত হবে। আমরা আবার একদিন একসাথে দীক্ষা পাবো প্রেমের পথে হাঁটার। লালন, কবীর, … সকলেই অনেকভাবে এই প্রেমের পথের কথা বলে গেছেন। সুকৌশলি ক্ষমতার নির্মিত ব্যস্ত জীবন, স্কুল-সিলেবাসের জ্ঞান ও অন্যান্য মোহবদ্ধতা সেসব ভুলিয়ে দিয়েছে ক্রমে। তবে আজও প্রেমই সত্যি; যা পৃথিবীর সমস্ত হিংসার সাথে লড়াই করবার একটি শক্তিশালী অস্ত্র।
আমাদের রাস্তার পাশের বিগ বাজারগুলো এখন ‘প্রেম’ বিক্রি করে। প্রেম বাজারি হয়েছে; মনুষ্যত্ব নিলামে উঠছে। সে সুযোগে চারিদিকে ধর্মগুরু আর রাজনৈতিক গুরুরা হিংসার আগুনে হাওয়া দিচ্ছে। ‘আচ্ছে দিনের’ মোহে আমরা সেই আগুনে ঝলসে যাওয়া রক্তে পিছিল হওয়া রাস্তাতে নির্বিকারে হেঁটে চলেছি।
ব্যস্ত জীবনের সামান্য অবসরে, আজ পিপল্‌স ফিল্ম কালেকটিভের উদ্যোগে যোগেশ মাইম আক্যাডেমিতে আমরা টুকরো সিনেমা, কিছু আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম, যে গোলকধাঁধার ভ্রান্ত পথে আমরা হেঁটে যাচ্ছি তার টুকরো নিদর্শন। ‘কেয়া হুয়া ইস শহর কো?’ (নির্দেশনা- দীপা ধনরাজ), ‘হোয়াট দ্য ফিল্ডস রিমেমবার’ (নির্দেশনা- শুভশ্রী কৃষ্ণণ), ‘রাম কে নাম’ (নির্দেশনা- আনন্দ পটবর্ধন), ‘দ্য বয় ইন দ্য ব্রাঞ্চ’ (নির্দেশনা- ললিত বাচানী), ‘দ্য মেন ইন দ্য ট্রি’ (নির্দেশনা- ললিত বাচানী), ‘ফাইনাল সলিউশান’ (নির্দেশনা- রাকেশ শর্মা), ‘দ্য ওয়ার্ল্ড বিফোর হার’ (নির্দেশনা- নিশা পাহুজা), ‘মুজফফরনগর বাকি হ্যায়’ (নির্দেশনা- নকুল সিং সাহানি) – এই ছবিগুলি থেকে নেওয়া অল্প অংশগুলো ক্রমপর্যায়ভুক্ত ভাবে সাজিয়ে দ্বৈপায়ন দেখানোর চেষ্টা করলেন এই সময়ের ধর্ম/ভক্তির নামে জিগির তুলে বিষিয়ে দেওয়া অসুস্থ সমাজের নৃশংস বাস্তব দিকগুলো। আমাদের দেশের এই অসুস্থ সমাজটির অসুখের একটি ঐতিহাসিক ধারা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ আছে। সংখ্যাগুরু মৌলবাদ, হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার ধারণা ও তার সাথে কোম্পানী নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রযন্ত্রের জোটের মিশেল সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদের এই অসুস্থ ইতিহাসের সাথে পরিচিত হওয়াটা জরুরী। কারণ এই লড়াইয়ে প্রতিপক্ষের জোরের জায়গাগুলোর সাথে আমাদের পরিচয় না হলে পরাজয় সুনিশ্চিত। দ্বৈপায়ন দেখালেন কখন কোন সময়ের প্রেক্ষিতে, কী কী পন্থাতে এই হিংস্র ধর্ম-রাজনীতি জনমানুষের চেতনাকে গ্রাস করেছে। যে হিন্দুত্ববাদের মধ্যে জাতিপ্রথার কারণে দলিত, নিপীড়িত মানুষেরা বর্ণহিন্দু-পরিচালিত ব্রাহ্মণ্যবাদী ব্যবস্থায় ক্রমাগতই লাঞ্ছনার, বঞ্চনার শিকার হয়েছেন, হচ্ছেন; কীভাবে কখনও কখনও তাঁদেরকেও ‘অখন্ড হিন্দুসত্তা’র মধ্যে গ্রাস করে তাঁদের একটি অংশের হাতে মুসলমান অপরকে নিকেশ করার জন্য তুলে দেওয়া হয়েছে অস্ত্র। দাঙ্গার আগুনে নিম্নবর্গ সংখ্যালঘুর সাথে নিহত হয়েছেন বড় অংশের হিন্দু দলিতরাও, যারা দুজনেই একই ব্রাহ্মণ্যবাদী ব্যবস্থার শিকার। এই সিনেমাগুলোর বিভিন্ন অংশ আমাদের কাছে আরও স্পষ্ট করলো, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আগামীর লড়াইটা চেতনার স্তরে অনেকখানি। কারণ আমাদের নিজেদের মানুষের মধ্যে কি সুচতুর কৌশলে এই হিংসার বপন করা হয়েছে, যেখানে পূজিত হন নাথুরাম গডসে আর ভগত সিং; কিন্তু আসফাকুল্লার দেশের স্বাধীনতার জন্য মৃত্যু হলেও সুচিন্তিতভাবে আসফাকউল্লাকে বিস্মৃত করে দেওয়া হয়।
কালেকটিভের তরফে দ্বৈপায়ন জানান যে আমরা এই অডিও ভিস্যুয়াল উপস্থাপনা, ছবির টুকরো ও তাকে ঘিরে কথা, নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় ঘুরতে চাই। আয়োজন করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিবর্গ, গণসংগঠন, নাগরিক উদ্যোগের সংগঠক, উদ্যোক্তারা উৎসাহী হলে যোগাযোগ করতে পারেন।
এর পরে মনোজ কুমার সিং তার জন্ম ও কাজের অঞ্চল গোরখপুর নিয়ে কিছু কথা বললেন। মনোজ ‘গোরখপুর অনলাইন’ বলে এক ওয়েব-পোর্টাল চালান। স্বাধীন সাংবাদিক। গোরখপুর ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে শুরু করে লোকরঙ্গ ইত্যাদি নানান ধরণের সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ন কর্মী। তার কথা ওই অঞ্চলে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ঘনীভূত হওয়া অশুভ হিংসার প্রতিচিত্রকে সামনে মেলে ধরতে সাহায্য করলো। তাঁর কথায়, “উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর তরাই অঞ্চল নেপাল সীমান্তের পাশে। সেখানকার এক প্রাচীন মঠ, যেখানে টিমটিমে প্রদীপের আলো; ঠিক মাজারের মতোই খুব ছোট বাবা গোরখনাথের স্তূপ যার চারিদিকে সাদা চকে আঁকা অসংখ্য মানত। এই নাথপন্থী সাধুরা বেশ ভিন্ন ছিলেন; এই নাথপন্থী সাধুদের প্রভাবে ওই অঞ্চলের বর্ণহিন্দুদের বিরুদ্ধে অধিকার আন্দোলনের একটা নতুন সূচনা হয়। সনাতন রীতির বিকল্পে এই ধর্ম আন্দোলন ক্রমশ দলিতবর্গের মধ্যে বিস্তার লাভ করে। তবে হিন্দুত্ববাদের বিস্তার এই ধারাকে টিঁকতে দেয়নি। সনাতন হিন্দুত্ব ক্রমশ এই মঠের সংস্কৃতিকে গ্রাস করে নেয়। দিগ্বিজয়-এর পুরোহিত কালীন সময় থেকে সনাতন ধর্ম, ক্ষমতার রাজনীতি ও বাজার একসাথে জোট বেঁধে এই প্রাচীন গোরখনাথের ধারাকে প্রতিআন্দোলনের রূপ দিয়ে এর গতিমুখ ঘুরিয়ে দেয় মুসলমান বিদ্বেষের মধ্যে। মন্দিরের দখলকৃত জমি, সম্পত্তি ও এলাকা বাড়তে থাকে; মূর্তি পুজোপাটের ধূমধাম (গোরখনাথ মূর্তি বিরোধী ছিলেন; তাঁরই মন্দিরে বসতে থাকে যাবতীয় দেবদেবীর মূর্তি)। মাউ দাঙ্গার আগে ও পরে এই গোরখনাথের মন্দির হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক হিংসার একটি শক্ত ঘাঁটি। দাঙ্গার হোতা মঠের বর্তমান মহন্ত যোগী আদিত্যনাথ বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। কীভাবে যেন সে আজ একইসাথে ধর্ম ও রাষ্ট্র নেতা হয়ে উঠেছে হিংসার রাজনীতিকে অবলম্বন করে। যে সময় থেকে আদিত্যনাথ এই সাম্প্রদায়িক হিংসা আর মৃত্যুর রাজনীতি প্রকাশ্যে করে যাচ্ছেন সেই সময়ে কেন্দ্রে সেকুলার কংগ্রেস ও রাজ্যে একাদিক্রমে সপা, বসপা প্রশাসনিক ক্ষমতায় থাকলেও তারা আদিত্যনাথের হিন্দু যুব বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচুর মৌখিক গর্জন করলেও কোন ধরণের কার্যকারী পদক্ষপ নেওয়া হয় নি। বরং এই সেকুলার দলগুলি বিভিন্ন সময় ২২ জন প্রশাসনিক কর্তাকে বদলি, সাসপেন্ড করার ব্যবস্থা করে; যখনই ওই প্রশাসনিক কর্তারা যোগী আদিত্যনাথের হিংসার প্রচার প্রতিরোধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে”।
মনোজ কুমার এর কথায় গোরখপুরের আরেকটি চিত্র বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাইবো। “একদল গেরুয়া বসনধারী যোগী (যারা প্রেম বিস্তার করে বেড়ায়) হাতে সারেঙ্গি নিয়ে গ্রাম, মহল্লায় অনন্ত পথ হেঁটে চলেছেন; গানের শব্দে ও ছন্দে প্রেম বিস্তারের কথা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। একই সাথে তারা প্রচার করছেন গোরখনাথের মতাদর্শ। ইতিহাস বলছে গোরখনাথের প্রচার বিস্তারে এই যোগীদের ভূমিকা সব থেকে বেশী। এরা সকলেই মুসলমান ধর্মের। বহু দশক ধরে এরা সারেঙ্গি নিয়ে গ্রামে মহল্লায় গোরখনাথের চারণকবি হয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন আজ অবধি। তবে পুরোহিত দিগ্বিজয়ের আগে নাথমন্দিরে এদের সম্মানিত স্থান ছিল। আজ মন্দির থেকেই তারা বিতারিত। খুব স্বাভাবিক, যে মন্দিরে হিংসা বাস করে সেখানে প্রেমের জায়গা কোথায়? আজ ওই সারেঙ্গি বাদক গেরুয়া বসনধারী সন্তদের নিজেদের মোল্লাবাদী ধর্মের কাছ থেকেও একইভাবে অবিশ্বাস ও আঘাত নেমে এসেছে। আজও আছেন তারা একই ভাবে তবে খুঁজে পাওয়া মুশকিল, জীবনের তাগিদে নানা সময় নাম পরিচয় বদলাতে হয় তাদের। প্রায় এক লক্ষ মুসলমান নাথপন্থী যোগী সারেঙ্গি বাজিয়ে ঘুরে বেড়াতেন ওই অঞ্চলে, এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও তাদের দেখা মেলে।”
এই বিষয় নিয়ে পড়তে পারেন মনোজের লেখা এই লেখাটি- http://thewire.in/119102/before-the-rise-of-hindutva-gorakhnath-nurtured-muslim-yogis/
এই ভীত সন্ত যোগীদের বর্তমান গোরখপুরের বীভৎস বাস্তবকে, তথ্যচিত্রে হিসাবে দলিলীকরণ করা হয়েছে ‘স্যাফ্রন ওয়ার’ নামক সিনেমাটির মাধ্যমে; যার পরিচালকত্রয়ী রাজীব যাদব, লক্ষ্মণ প্রসাদ, শাহনওয়াজ আলম। এই ছবিটি প্রদর্শনের সময় সাউন্ড কর্ডের কিছু যান্ত্রিক গোলযোগ হয় যার ফলে বেশ কিছুটা অংশে সাউন্ড ঠিকমত শোনা যায়নি। প্রথম বার হওয়া এই অপ্রত্যাশিত সমস্যার জন্য পিপল্‌স ফিল্ম কালেকটিভ দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। সমস্যাটি চিহ্নিত করা হয়েছে ও ভবিষ্যতের অনুষ্ঠানে এই সমস্যা যাতে না হয়, সংগঠনের পক্ষে তার ব্যবস্থা করা হবে।
যাদের হৃদয় এখনও শুধুমাত্র রক্তসঞ্চালনের যন্ত্র হয়ে ওঠেনি; তাঁদেরকে বলছি : খুব ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও যদি একটু চেষ্টা করে ইউটিউবে এই ছবিটা দেখে নিতে পারেন তাহলে কিছু লোভী মানুষ ও তাদের ক্ষমতার তৈরি করা আচ্ছে দিন, হিন্দুরাষ্ট্র, মুসলমান বিদ্বেষ এসব নিয়ে যে মায়াজাল তাকে ভেঙে দেওয়া সহজ হবে।
সব শেষে, মনে করিয়ে দিই; গুরু বা নির্মোহী সন্তকে আগামীর স্বপ্নে দেখবেন। কারণ সে আপনার অন্তরেই লুকিয়ে আছে। আপনার হৃদয়ে, মানবিকতা, মনুষ্যত্ব, বিবেক, আর গভীর প্রেম উপলব্ধি নিয়ে যখন আশেপাশের ধর্ম-রাজনীতি ও নিকৃষ্ট ক্ষমতার মায়াজালকে দেখবেন। আপনি প্রতিরোধী হয়ে উঠবেন, কথা দিচ্ছি। আমরা একসাথে নানাভাবে হিংসার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পথে নামবো। আমরা জয়ী হবো। আমার দেশের মাটিতে কখনো মৃত মায়ের বুকে খাবার খুঁজবে না আগামীর কোন শিশু। এই প্রতিশ্রুতিতে …
অপেক্ষায়…
প্রেমের জয় সুনিশ্চিত।
রিপোর্ট – লাবনী।

মোটর ভেহিকেল্‌স এর পাশ দিয়ে বেলতলা রোডে ঢুকতেই চোখের সামনে এক ঝাঁক বাচ্চা এসে উপস্থিত। ১৫ই অক্টোবর আমরা পিপল্‌স ফিল্ম কালেকটিভের পক্ষ থেকে লিটল সিনেমা টিমের ন’জন মিলে গিয়েছিলাম পেয়ারাবাগানে ছোটদের সিনেমা দেখাতে। সে এক হৈ হৈ ব্যাপার। সবাই যেন উৎসবে মেতেছে। রাস্তার খানিকটা অংশ জুড়ে আদ্ধেক তৈরি হওয়া প্যান্ডেলের বাঁশের কাঠামোর গায়ে পর্দা টাঙিয়ে সিনেমা দেখা। পাশ দিয়ে যাতায়াতের জন্য খানিকটা ছেড়ে রাখা। শুরু হল বার্ট হান্সট্রার ‘জু’ দিয়ে। ছোট ছোট মুখগুলোতে অসাধারণ অভিব্যক্তি ফুটে উঠছে। চিড়িয়াখানায় আটক না-মানুষ বাসিন্দারা আর তাদের দেখতে আসা মানুষজন মিলেমিশে গেছে তাদের ব্যবহারিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে। বার্ট হান্সট্রা-র দ্বান্দ্বিক সম্পাদনা আর শব্দের অসাধারণ ব্যবহারে দর্শককে ভাবায় চিড়িয়াখানার পরিসর নিয়ে। মানুষ আর না-মানুষ, আদতে কে কাকে দেখছে? কে কাকে নকল করছে? ছোটরা খুব আনন্দের সাথে উপভোগ করল সিনেমাটি।

পরের সিনেমাটির পরিচালক অশ্বিন কুমার। ছবি ‘লিটল টেররিস্ট’। দেশ আর সময়ের ভেদাভেদ মিটে যায় মানবতায়। ছোট বাচ্চারা নিষ্পাপ হাতে হাততালি দিয়ে ওঠে যখন পাকিস্তানের ছোট্ট ছেলে জামাল খেলার বল কুড়োতে বর্ডার পেরিয়ে চলে আসে ভারতে কিন্তু শেষটায় সেনাবাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পায় গ্রামের হিন্দু শিক্ষক আর তার মেয়ের সাহায্যে। সেই মানুষগুলোই কিন্তু প্রথমে পুরনো অভ্যেসের বশে ওই বাচ্চাটিকে সন্দেহ করেছিল, ধর্মের কারণে এক পাতে খেতে চায়নি।

সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘টু’ দেখতে দেখতে ছোটরা বলে উঠল যে বড়লোক বাচ্চাটি ওর দামি খেলনা দিয়ে বারবার গরীব বাচ্চাটিকে হারিয়ে দিলেও পরে বোকা বনে গেল। হঠাৎ দেখতে পেলাম দর্শকদের মধ্যে একটি ছোট ছেলে সামনে একটা ঢাক আর হাতে ঢাকের কাঠি নিয়ে ‘টু’ সিনেমাটি দেখছে ঠিক যেমন সিনেমাতে গরীব বাচ্চাটি ঢোল বাজায়।

এরপরে পর্দায় এল নর্ম্যান ম্যাকলেরেন আর ক্লড যুত্রা-র ছবি ‘এ চেয়ারি টেল’। এই ছবিটি তৈরি হয়েছে স্টপ মোশন টেকনিক দিয়ে। শব্দের ট্র্যাকে রবিশঙ্করের সেতার আর চতুর লালের তবলা। অ্যানিমেশন-এর মজা পাওয়ার সাথে সাথে তারা ‘শুধু একতরফা নেওয়া নয়, নিজেকেও কিছু ছাড়তে হয়’ বা ‘বন্ধুত্বের নির্ভরতা হয় উঁচু-নিচুতে নয়, সমানে-সমানে’ এমন কথাও বুঝল।
পরের ছবি নাগরাজ মঞ্জুলে-র ‘পিস্তুলিয়া’। ছবিটি দেখে ক্লাস টু-তে পড়া মিতা এসে বলল “জানো, ভাই চায় ওর বোন পড়াশোনা করুক, তাই জামাটা চুরি করল। ওদের তো পয়সা নেই…তাই…”। বেঁচে থাকার সংগ্রাম ওদের মনেও কেমন প্রভাব ফেলেছে বুঝলাম। পিস্তুলিয়ারা পৃথিবীর আলো–রোদ্দুর মেখে বেঁচে থাক।
এর পরে অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ওদের মনে ভাবনা উস্কে কিছু কথা সামনে আনতে দু’টি সিনেমার অংশবিশেষ দেখাই আমরা। ছবি দুটি হল পরশুরামের বিরিঞ্চিবাবা গল্প অবলম্বনে সত্যজিৎ রায়ের ‘মহাপুরুষ’ আর চ্যাপলিনের ‘সিটি লাইটস’ এর বক্সিং দৃশ্যটি। চ্যাপলিনের কাণ্ডকারখানা দেখে ছোট বড় নির্বিশেষে যা খুব প্রত্যাশিত তাই হল। আর আমরাও বেশ খুশি পেয়ারাবাগানের একমুঠো রোদ্দুর কে ছুঁতে চাওয়ার প্রচেষ্টায়।
-সুতপা ঘোষ।
‘Aunty, the last time you had come you had shown us so many films. You’ll show us films this time also?’
We were greeted with smiles and hugs at Peyarabagan on Beltala Road. Many of the children remembered the films we had shown the last time we were there, which was so heartening, given that six months had passed!
After everyone had settled down, which was a task in itself because there were more than a 150 children, we played a short game. The children had to imitate each action I did. I tried actions that were similar to those in the short film Zoo, by Bert Haanstra, since it was the first film we were going to show. So there was yawning, stretching, scratching and so on.
Following Zoo, and a short discussion on who was imitating whom (some children said the humans were imitating the animals, some said it was vice versa), we screened Little Terrorist, directed by Ashvin Kumar. This short film tells the story of a boy who inadvertently crosses over from Pakistan into India and how the family who rescues him shaves his head, leaving only a tuft of hair—signifying that he is Hindu—thereby protecting him from the border police. The children were engrossed, some whispering: ‘Will they shoot the boy?’.
Most of them immediately understood that the reason why the hair was cut was religion—and how physical appearance was taken as an indicator of religion. What amazed me was how the children immediately identified the mines in the sand—but I suppose children are exposed to so much these days!
AfterLittle Terrorist, we screened Two by Satyajit Ray. This film shows a game of one-upmanship between a well-to-do boy and a boy living in a shack.
‘ Aunty, the rich boy was feeling jealous of the poor boy. He wanted to show that he had nicer toys.’
‘ In the end, it didn’t serve any purpose. Kono laabh holo na.’
The next film was A Chairy Tale by Norman McLaren and Claude Jutra. ‘ Have you ever tried to sit on a chair and the chair didn’t let you?’, I asked the children. No, they said in unison, looking at me quizzically. This film shows, through stop motion animation, a situation where a man wants to sits on a chair, but the chair simply won’t let him. After various attempts, the chair only lets him sit on it, after it sits on him.
Next on the list was Pistulya, a film by Nagraj Manjule. I explained the story to the children before we started the film as it is in Marathi. I think the children were able to relate to the film, comprehending immediately that the boy stole the uniform for his sister, so that atleast she would be able to attend school, even if he wasn’t able to. They even related the film to Chanda ke Jootey, which we had shown them before.
After this, we screened a brief segment from Mahapurush and the boxing scene from Charlie Chaplin’s City Lights. Both these highlight belief in superstitions. After the segment from Mahapurush, I asked the children what they thought. Many said that perhaps the Baba shown in the film was fake. Some said that they knew people who believed in holy men. I think that this is a discussion that needs to be continued. Children should be able to think critically about whether those who claim to do magic and claim to be holy men are really to be believed or not. I hope that showing these films has sowed the seed of thought.
The children at Peyarabagan are a wonderfully intelligent lot. This is the second time that Civilian Welfare Foundation, who run a school in the neighbourhood, has invited us and each time I wonder at the responses we get.
Report: Paroma Sengupta
Photos: Kunal Chakraborty
Peyarabagan basti
15 October 2017