“শত শত চোখ আকাশটা দেখে…
আকাশে বসত মরা ঈশ্বর
নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে?”
নালিশ জানাতে চাই, কাকে জানাবো? এই দেশের স্বাধীনতা উৎযাপনের খবরের ভিড়ে পাঁচ দিনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে তেষট্টি শিশুর নিথর হয়ে যাওয়া খবরের কবর দেওয়া হয়ে যাবে। শিশুদের সৎকার নাকি মাটিতে পুঁতে হয়। হা ঈশ্বর! তুমিও কবরেই তবে, খবরে তোমার ‘ভক্তকুল’ শুধু। ইতিহাসগুলো একে একে কবরের অন্ধকারে মিশে যাচ্ছে জানি। তবুও নালিশ জানাবো, মরা ঈশ্বর আর কবরের অন্ধকারে ভুলতে বসা সেইসব ইতিহাসের কাছে নালিশ জানাবো।
“যুদ্ধ শেষ, দেশ স্বাধীন!”
“বিজয়-উল্লাস আর উৎসবের এই আনন্দ মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে সেই সব মুক্তিযোদ্ধাদের কথা। সেই বালক যোদ্ধা যার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ চাহনি, মনে পড়ছে বৃদ্ধ কৃষক সেই মুক্তিযোদ্ধার কথা। আমি কোনোদিন ভুলবো না গামছা মাথায় সেই স্বাধীনতার সৈনিককে; যার সাহসিকতা ছিল কিংবদন্তীর মতো। কোনোদিন ভুলবো না অকুতোভয় সেই বীর শহীদদের যারা প্রাণ দিয়েছিল বিজয় ছিনিয়ে আনতে। কিন্তু এই মহৎ আত্মদানের কথা মনে রাখাই কি যথেষ্ট? প্রশ্ন, তবু থেকে যায়। আমরা কি পারবো তাঁদের আত্মত্যাগের মর্যাদা রাখতে? আমরা কি পারবো তাঁদের সে মহান লক্ষ্যকে সমুন্নত রাখতে?” প্রশ্ন উঠল কথকের কন্ঠে ছবির শেষে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় একদল সংঘবদ্ধ ভ্রাম্যমাণ সাংস্কৃতিক কর্মী কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের অংশ হয়ে মুক্তির লড়াইকে দেখেছিলেন সে নিয়ে তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদের তথ্যচিত্র ‘মুক্তির গান’ শুরুতেই দেখানো হল।

                                                ‘মুক্তির গান’ ছবির দৃশ্য

                      ‘মুক্তির গান’ ছবির দৃশ্য
সিনেমাটির রেশ ধরে শেষ প্রশ্নের উত্তরে আমরা হয়তো জানি মুক্তিযুদ্ধের এইসব আত্মত্যাগকে কতো সহজেই ধর্মের নেশা চড়িয়ে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে দেওয়া হয়েছে… এবং হচ্ছে। যশোর রোড সাক্ষী মুক্তিযুদ্ধের পরও স্বাধীন দেশের, পোড়া ঘরের কতো মানুষেরা ওই রাস্তা অতিক্রম করতে বাধ্য হয়েছেন। বাংলাদেশের পার্বত্য জনজাতির উপর ধর্মীয় আক্রোশ সহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আজও বহাল। ঘর পুড়ছে, সাথে মানুষও, তবুও দেশ স্বাধীন, আর নিয়ম করে আসে স্বাধীনতা দিবস। ঠিক আমাদের ভারতবর্ষে যেমন সমারোহে পালিত হচ্ছে ভারতমাতার পুজো-দিবস। শহরের মধ্যে বড় প্যান্ডেল আর বাঘের পীঠে চড়া তিরঙ্গা হাতে ফর্সা দেবী; এ’বছর ঘটা করে স্বাধীনতা দিবসে তার পুজো হল। মানুষের ‘মুক্তির’ ভাবনাকে যখন রাষ্ট্র, ধর্ম ও বাজার তাদের ঘরানাতে আচ্ছন্ন করে রাখে তখন হয়তো এমনটাই হয়। ঘরে সন্তানের লাশ আর মায়ের আর্তনাদ রেখে, রাস্তায় ভারতমাতার পুজো-আর্চা করে এই ইলিউশনকে আরও ঘন করা। আহাঃ (রে) ভারতমাতার জয়!
“মাথার ভিতরে বোমারু বিমান, এই কালো রাত কবে হবে শেষ”।
আদৌ কি যুদ্ধ শেষ? কবে যুদ্ধ শেষ হল? কার সাথেই বা যুদ্ধ ছিল? বছর কুড়ি বয়েসে যখন অনেক স্বপ্নরা বুক বাঁধছিল; দেশ, স্বাধীনতা এসব নিয়ে কীরকম ভাবতাম আমরা, বা কীরকম ভাবি আমরা এখন? স্বাধীনতার কুড়ি বছর পরে এস.এন.এস. শাস্ত্রীর তথ্যচিত্র ‘আই অ্যাম টোয়েন্টি’–তে (১৯৬৭) উঠে আসে ভারতের বিভিন্ন বর্গের বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত কিছু মানুষের কথা। যারা স্বাধীনতা দিবসের ঐ সালে ও তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিল। তাদের আশা, আকাঙ্ক্ষা, চাহিদা, ইচ্ছে, ভয়, অবসাদ এসব প্রশ্ন নিয়ে সেই সময়ের প্রেক্ষিতে একবারে নতুন ঘরানার একটি সিনেমা। সিনেমাটা সরল স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে তবে যে প্রশ্নগুলো রেখে যায় তা হতো আমাদের এখনকার ৭০ বছরের নির্মিত কিছু ভাবনাকে নতুন করে ঘুরিয়ে দেয়। মধ্যপ্রদেশের ঐ যুবক কৃষককে প্রশ্ন করা হয়, ভারতের রাষ্ট্রপতি কে জানো? -না সাহেব; ভারতের প্রধানমন্ত্রী কে জানো? -না সাহেব; মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী? -না সাহেব; উজ্জয়িনীর কালেক্টার? -হ্যাঁ সাহেব। এই কৃষকের দেশ বলতে কী আর কোন দেশ জানা দরকার নেই কি? একটি মেয়ে বলে নয় বছর বয়সে তার বিয়ে হয়, সেখানে সে দুবেলা খেতে পাবে তাই সে বিয়ে করে। আবার কোন যুবক বলে সে ফ্রেঞ্চ, জার্মান শিখতে চায়। কেউ রক জীবনকে ভালোবাসে, কারুর তিনশোটা শাড়ি চাই। স্বাধীন-ভারতে জন্ম নেওয়া ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ এই মানুষগুলোর একের পর এক ইন্টারভিউ শুনতে শুনতে একটা তীব্র শব্দ কানে ভোঁ লাগাতে শুরু করে, অনেক বাক্যরা ক্রমাগত শ্রমিকের মোটবওয়া থেকে গরুর চাকার ও যান্ত্রিক যানবাহনের শব্দে মিলিয়ে যেতে থাকে, মিলিয়ে যেতে যেতে প্রশ্ন রেখে যায় কাদের স্বাধীনতা আর কীভাবে? যদি আমরা একটু ভাবি এ দেশের স্বাধীনতার সাথে মানুষের, জীবনের মুক্তির ধারণা আদতে কতটা জড়িয়ে?

                                                     ‘আই অ্যাম টোয়েন্টি’ ছবির দৃশ্য

                                        ‘আই অ্যাম টোয়েন্টি’ ছবির দৃশ্য
মনের মধ্যে এই শ্রেণীগত অসাম্যের প্রশ্নকে তৈরি করেই পরবর্তী সিনেমা ‘ইন দা শেড অফ ফলেন চিনার’ শুরু হয়। কাশ্মীর উপত্যকার মানুষের স্বাধীনতা-অধিকারের লুণ্ঠন নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবু যে সব সমতলের মানুষেরা আজও ভাবেন কাশ্মীর হল ভূস্বর্গ, আমাদের পাঠ্য বইয়েও লেখা থাকে কাশ্মীরকে কেন ভূস্বর্গ বলা হয়। কিন্তু কখনো এটা পড়ানো হয় না এই স্বর্গের ‘মৃত’/’রাষ্ট্রের হাতে খুন’ হওয়া নাগরিক, অথবা সেসব মৃত সন্তানের মায়েরা বা আত্মীয়রা কীভাবে আছেন আর কেমন করে বাঁচেন। এসবের জবাবের দায় রাষ্ট্রের নেই, ধর্ম-বাজারের তো নেইই। তাই কখনও কখনও সন্তানহারা মায়েদের কথা বলতে সৈনিকের বুট ও বন্দুকের আওয়াজ ছাপিয়ে যায় গান, সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ; তৈরি করে অন্য আখ্যান। একথা ঠিকই যে বন্দুক ও বোমার সাথে পাথরের এই যুদ্ধে অসামঞ্জস্য আছে, তবুও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, আলজেরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রাম বা ভিয়েতনামের যুদ্ধ আমাদের হয়তো শেখায় এই চরম অসাম্যের লড়াইয়ে দুর্বল অস্ত্রগুলোও কখনো কখনো কি ভীষণ পরিমাণে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। কাশ্মীর ইউনিভার্সিটির কিছু পড়ুয়া যারা নিজেদের কাশ্মীরকে চেনাতে সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের মধ্যে দিয়ে যেন একটি মুক্তিসংগ্রাম চালাচ্ছেন। সিনেমাটি ওখানকার নিজস্ব কথা ও সংস্কৃতি নিয়ে। কাশ্মীরের মানুষের এই দেশে যে পরিমাণে এলিয়েনেশন সেটা কোনদিনও কাটানোর প্রচেষ্টা হয়েছে কিনা জানা নেই। ধর্মের উপর ভিত্তি করে দাগিয়ে দেওয়া “সন্ত্রাসবাদী”, “পাকিস্তানের চর”, অপবাদগুলোর সাথে আছে গুম হয়ে যাওয়া সন্তানেরা।

                               ‘ইন দা শেড অফ ফলেন চিনার’ ছবির দৃশ্য

                     ‘ইন দা শেড অফ ফলেন চিনার’ ছবির দৃশ্য
তবুও অনেক বছর আগে, এক বীভৎস প্রশ্নের একটা অসম্ভব কাম্য উত্তর পাওয়া যায় একটি সিনেমায়। এম এস সথ্যুর ‘গরম হাওয়া’। “ইনসান কবতক অকেলা জী সকতা হ্যায়?”। স্বাধীন ভারতে একটি মধ্যবিত্ত মুসলমান পরিবারের কথা। স্বাধীন ভারতে তাঁদের অবস্থার বিবর্তন। দেশভাগের নৃশংস প্রভাব সহ, চারিদিক দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে ধরে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বঞ্চনায় ন্যুব্জ হয়ে আসে পরিবারটি। বসতভিটে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয় পরিবারটি, তবু দেশের মাটি ছাড়তে পারে না। পরপর অনেকগুলো ঝড় পেড়িয়ে মাটি উপড়ে যেতে শুরু করে। তখনো সেই ভগ্ন মনের মধ্যেও কোথাও একটা আশার সঞ্চার; বাড়ির ছোট ছেলেটি বলে ওঠে, “আমাদের পালিয়ে না গিয়ে এখানে থেকে লড়াই করা দরকার; এই অবস্থার বদল আনা দরকার”। তবু কোনও একটা সকালে ভাড়াবাড়িতে তালা পড়ে নতুন দেশে নতুন জীবনের খোঁজে। আর সেদিনই রাস্তায় একটা মিছিল বেড়িয়েছিল যা বেঁচে থাকার অধিকার, রুটি-কাপড়-ঘরের অধিকার, এমন অনেক মুষ্টিবদ্ধ অধিকারের মিছিলে সোচ্চার। লালপতাকার সেই জনঅরণ্যের ডাক এতো সোচ্চার ছিল যে সব-খোয়ানো মানুষের আশ্রয় সেই মিছিল হয়ে উঠতে পেরেছিল। সেলিম মীর্জা তাঁর সন্তানকে আটকান না; বলেন যাও- “বেটা, অব ম্যায় তুমহে নহি রোকুঙ্গা, ইনসান কবতক আকেলা জী সকতা হ্যায়।”
স্ত্রীকে বলেন, “জামিলা, ম্যায় ভি জিন্দেগী কি ঘুটন সে তংগ আ গ্যায়া হু; বল্লা, টাঙ্গা ওয়াপস লে যাও।”
-“ঘর কো!”
-“হাঁ” ; চাবিটা স্ত্রীর হাতে দিয়ে সেলিম মীর্জা মিছিলের অংশ হয়ে যান।
…সিনেমাটার শেষ কটা শব্দ কীভাবে মন, মাথাকে আক্রমণ করলো জানা নেই তবে একবার পুনরায় মনে মনে জপে নিতে ইচ্ছে হল সেই মন্ত্র-
“যো দূর সে তুফান কা করতে হ্যায় নজারা,
উনকে লিয়ে তুফান, উয়াহাঁ ভি হ্যায় ইঁয়াহা ভি;
ধারে মে যো মিল যাওগে, বন যাওগে ধারা
ইয়ে ওয়খত কা এলান, উঁয়াহা ভি হ্যায় ইঁয়াহা ভি”।
কিন্তু ডানিয়েল ব্লেক একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক, যে ঝড়ের সাথে একটানা লড়াইয়ে পরাস্ত হয়েছিল। “আই ডানিয়েল ব্লেক” (নির্দেশনা- কেন লোচ)। এই ছবিতে মৃত্যুর পর খেটে খাওয়া এক নাগরিক বলে গেলো, আমি এই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কুকুর নই, সহানুভূতির দরকার নেই, প্রাপ্য কাজের সুযোগ ও সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার চাই। আমাদের স্বাধীন ভারতে সেলিম মীর্জারা পুনরায় ঝড়ের মধ্যে ফেরে; তবে ডানিয়েল ব্লেকের মতো নাগরিক সম্মানের অধিকার আদায়ের দীর্ঘ রাস্তা পেড়িয়ে আজও কোন ঠিকানা খুঁজে পান না।

                      ‘গরম হাওয়া’ ছবির প্রদর্শন

                                                                        ‘গরম হাওয়া’ ছবির দৃশ্য
আর আমাদের চারপাশে রাস্তায় চীৎকারে ক্রমশ নতুন মিছিলের ভিড় দেখা যায়, যে সব মিছিলে আজকাল সেলিম মীর্জাদের পাকিস্তানে ভাগিয়ে দেওয়া বা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে যাবতীয় অসম্মান ও অসাম্যের মধ্যে জীবিত অথবা মৃত হয়ে থেকে যাবার দাবী সোচ্চার। রাষ্ট্র, ধর্ম, বাজার একযোগে ধ্বংসের এই ঝড়কে প্রবলতর করে তুলছে। সে মুহূর্তে সেলিম মীর্জাদের টিঁকে থাকার লালঝাণ্ডা ক্রমশ ফিকে হচ্ছে। লুপ্ত হচ্ছে বিচারবোধ, নৈতিকতা, মানবিকতা। হিংসা, জয়ের গেরুয়া নিশান ওড়াচ্ছে। সেলিম মীর্জারা বহুদিন ধরে লাল পতাকার নীচে স্বপ্ন দেখতে দেখতে ও স্বপ্নভঙ্গ হতে দেখে ক্লান্ত। অবশেষে কেউ হয়তো পুরনো বিশ্বাসে ফিরে ধর্মকে আঁকড়ে শেষ জীবনটুকু কাটাতে চাইছে। তবুও এখনো দুনিয়া বদলের স্বপ্ন নিয়ে ছোট বড় নানা পরিসরে নানা প্রতিরোধ গড়ে উঠছে।
দিনের শেষ সিনেমাটি এই পরাক্রমশালী স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের মধ্যে সাংস্কৃতিক কর্মীদের উপর যে আক্রমণ, হত্যার ষড়যন্ত্র তা নিয়ে। মহম্মদ রাসুলুফের ‘ম্যানুস্ক্রিপ্টস ডোন্ট বার্ন’ চোখ ও কান খুলে মাথা ও মনকে কাজে লাগিয়ে যে মানুষগুলো দুনিয়াটা দেখে তাদের জন্য জরুরী। হয়তো এই প্রবল স্বৈরতন্ত্রের সময়ে ক্ষমতা আর বাজারি আধিপত্যের মাঝে মানুষ যখন বুঁদ হয়ে যায়; তখনও কিছু মানুষ মনের কথা, ভয়ংকর সত্যের কথা শোনে, বলে, লেখে, ছবি বানায়, গান গায়।
যারা গান গেয়ে মনে করায় “কিষাণ মজুর বাংলার সাথী রে… ও ভাই মোর কীসের এত ভয়! তোমার হাতেই দেশের মাটি, হবে রে হবে রে হবে জয়”! হিন্দু-মুসলমানের লড়াই নয়; যারা মনে করানোর চেষ্টা করে গরীব-বড়োলোকের লড়াই-এর কথা। যাদের শিল্পশৈলী মাটির সাথে মিশে মাটির রঙ ধরে নিয়ে বলে নিজেদের কথা, সংগ্রামের কথা, অধিকারের কথা। টিঁকে থাকা ও সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের ভেদ শেখায়, তাদের ম্যানুস্ক্রিপ্টে ক্ষমতাশালীর বিরদ্ধে সোচ্চার হবার কথা উঠে আসে, তাই ক্ষমতাবানেরা সব ধরণের হিংসা নামিয়ে আনে সেই ম্যানুস্ক্রিপ্ট ও তার রচয়িতাদের উপর।

                                   ভারতীয় সিনেমায় সেন্সরশিপ নিয়ে বলছেন অধ্যাপক সোমেশ্বর ভৌমিক

                                              দর্শকের প্রশ্ন

                    আলোচনার শ্রোতারা
এই ভিন্নধর্মী সিনেমাগুলির প্রদর্শনের মাঝে সোমেশ্বর-দার বক্তব্যে ধরা পড়ে ভারতীয় সিনেমার প্রেক্ষিতে পচে যাওয়া সমাজব্যবস্থা আর রাষ্ট্রের বিরোধী স্বরগুলোকে লাখো লাখো মানুষের সামনে সিনেমার পর্দায় আসা থেকে আটকানোর, শিল্পীদের মুখ বন্ধ করার নানা বিচিত্র উপায় ও পদ্ধতি। ভারতের ফিল্ম সেন্সর বোর্ড কোন আইনে কীভাবে কাজ করে। সেই আইন এলো কখন এবং কেন? কীভাবে মেনে নেওয়ার অভ্যেস তৈরি করা হয়েছে। রাষ্ট্রের কড়া নজরদারি। কলাটা মুলোটা ঝুলিয়ে শিল্পীদের মধ্যে থেকেই মোসাহেব অংশ তৈরি করে সেন্সর বোর্ড চালানো। তার রাজনৈতিক প্রেক্ষিত। এর ফলে সেলফ-সেন্সরশিপ। নাকের সামনে মুলো ঝুলিয়ে কর্পোরেটের সুললিত বদান্যতায় চলচ্চিত্র উৎসবের ‘মামি’ থেকে ‘জিও মামি’ হয়ে ওঠা ও তৎপরবর্তী সুচারু সেন্সরশিপ থেকে শুরু করে বজরঙ্গী ভক্তকুলের ভগওয়া ঝান্ডার গুন্ডাগর্দী-সেন্সরশিপ, উঠে আসে এমন নানা প্রসঙ্গ। শুনতে শুনতে মনে হয় বুঝি বা ডানিয়েল ব্লেকের সেই কথা শুনছি – “ইটস এ মনুমেন্টাল ফার্স, ইজন্ট ইট!”
ক্ষমতার হিংসা-জুলুম আগেও হয়েছে যেমন, আজও চলছে তেমনই। তবু প্রতিরোধ জারী থাকে। পিপল্‌স ফিল্ম কালেকটিভ সেই স্রোতেরই অংশ হয়ে প্রতি সেকেন্ডে ২৫টা ফ্রেমের চলচ্ছবির মধ্যে স্বাধীনতা আর মুক্তির সুলুক নিয়ে এ’দিন সাড়ে তিনশো-চারশো মানুষের কাছে পৌঁছোয়, এই গুমোট সরফরাজি অন্ধকারের মধ্যে মিলেজুলে নতুন অন্বেষণের কিছু রাস্তা খুঁজতে।

                      উৎসবের বাইরে স্টল

                           পর্দায় তখন ‘গরম হাওয়া’

‘Ma’am we are already excited’, said some of the girls from Muralidhar Girls School before entering the hall. This was their first time at Kolkata Peoples Film Festival and I found them poring over the festival pamphlet.

After a brief introduction to the festival and the Little Cinema initiative, Subhashish da introduced the first film, Printed Rainbow, directed by Gitanjali Rao. This animated film depicts the life of an elderly woman and her cat and how they get lost in the magical world of matchbox covers.

Ones worldview changes according to ones age and the life lived. We learn from our experiences through what we live. What then, is the relationship between a grandparent and a grandchild? Is there one?

The film uses colour cleverly to show the connect with the present and how the old lady feels. For instance, when she is lost in her world of matchbox covers, the colour palette is bright . . . essentially, the colours of the rainbow. When she is in the ‘real world’, the colours are dull: grey and white.

One of the older members of the audience shared a more optimistic view, saying that all colour is not lost from the world.

After a short discussion on the importance of dialogue between generations and the need to understand difference perspectives, particularly between generations, we moved onto the second film.

The Cake Story, directed by Rukhsana Tabassum is about a boy and his father, in search of a bakery which has the boy’s birthday cake. The film, while lighthearted and funny in parts also shows a very fundamental characteristic of children- their faith in the world and their belief in their parents. Rukhsana spoke to the 250 odd children and their teachers about what inspired her into making this film, particularly her experiences working with children and her time with her grandparents.

The final film in the Little Cinema session was Kaphal (Wild Berries), directed by Batul Mukhtiar. Centered on the lives of two boys and their father, this film also addresses social isolation, particularly of people who are ‘different’ from the norm. This film resonated with the audience.

While waiting for the snacks that were arranged for the students who had come, some of them spoke about how the session was different, something they had never experienced before. One of the teachers who accompanied them mentioned how she wouldn’t have minded discussing the films for another four hours!

After a break for lunch, the audience reassembled for the inauguration, with a welcome note by Trina Nileena Banerjee and words from Ajay T.G., Manas da, Teena Kaur Pasricha, Bipul Chakrabarti and Rukshana Tabassum. The guests spoke of their association with film making and the People’s Film Collective, their inspirations and work.  The book ‘Towards A People’s Cinema-Independent Documentary and its Audience in India’ edited by Kasturi Basu and Dwaipayan Banerjee was released following which, we resumed the programme.

Gunjan Rana from the Peoples Collective spoke a few words about the work that they do and what inspired them to work on the music video Bristrit Kinarako (On Your Mighty Wide Banks) after which it was screened for the audience.

‘The communal harmony was really vitiated in a relatively communally peaceful Kerala with RSS propaganda machine working round the clock to project Hadiya’s voluntary decision to embrace Islam as Love Jihad. . .’

We moved onto the New Documentary section with I Am Hadiya, directed by Gopal Memon followed by Nuclear Hallucinations, directed by Fathima Nizaruddin. The first is about the propaganda machinery in Kerala, one of the supposedly non communal states of India, and how a young woman named Hadiya is separated from her husband on account of supposed Love Jihad. The events that are recounted in the film have played out in front of our eyes, on television, print and social media. It begs the question, aren’t we as citizens of this country free to chose whom we wish to marry, and if it happens to be someone from another religion so be it? Nuclear Hallucinations is about the protests centered on the Kudankulam nuclear power station in Tamil Nadu.

The next two films: This or That Particular Person by Subasri Krishnan and I.D by Kamal K.M. addressed the issue of the UID or the Aadhaar card raising the questions of identity, equality and the possibility of the card being a part of a larger ‘big-brother’ agenda. The first film was followed by a talk by Ranjit Sur.

He began his talk by narrating the a story of a man who while ordering a pizza was given his entire personal history by the operator down to his bank balance, his blood reports and the number of people in his family. While amusing at first, this story has an undercurrent. What purpose do identity cards serve? The UID or the Aadhar Card holds every bit of information on you. This is where, as a country, we stand. As Sur said, is it not against the very principles of democracy? Where the Government holds every single bit of information on you and where you yourself cannot avail of any information from the Government?

This was followed by the final film for the day: Koi Chand Bhi Nahin (There is no Moon) directed Ajay T.G. and a talk with the director. Ajay spoke about how the people of Chhattisgarh who are displaced by various corporate backed ‘development’ schemes have to deal with the destruction of their homes and displacement from their land. The film documents this through interviews and first person accounts.